তবে কি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস-ই নতুন মহামারী?

বর্তমানে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের Uncontrolled Diabetes আছে বা অন্য রোগ আছে তাদের মধ্যে এই ফাঙ্গাসটা বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ইন্ডিয়াতে প্রায় ৭২০০ রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ভয়ানক ভাবে বেড়ে চলেছে এর আক্রান্তের হার। মারা গেছে ২১৯ জনের মতো। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে।


🔵
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কী?:
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হলো এক ধরনের ছত্রাক জনিত রোগ (Mucormycosis).
🔵
কোথায় আক্রমণ করে?
সাধারণত এই ফাঙ্গাস আক্রমণ করে নাকে, চোখে এবং মস্তিষ্কে তাই একে Rhino-Orbital-cerebral(ROC) Mucormycosis বলে। তবে এটা ছোঁয়াচে নয় এবং এক ব্যক্তি হতে আরেক ব্যক্তিতে ছড়ায় না। এর মৃত্যুর হার অনেক বেশি কারন এটা নাক, চোখ ও ব্রেনে আক্রান্ত করে তাই।
🔵
কোথায় থাকে?
ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আমাদের পরিবেশে আগেও ছিল। এই ফাঙ্গাস ভারত থেকে আসে নি। পরিবেশের যে কোন পচনশীল জৈব বস্তুতে এমনকি ভেজা মাটিতে, স্যাঁতসেঁতে দেয়ালে এই ছত্রাক জন্মাতে পারে।
🔵
কারা ঝুঁকিতে আছে?
করোনায় আক্রান্ত ও করোনা থেকে সুস্হ হওয়া রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং যাদের স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ এবং টসিলিজুমেব নিতে হয়েছে। এছাড়াও যারা ক্যান্সারের চিকিৎসা পাচ্ছেন বা ক্যান্সার থেকে সুস্হ হয়েছেন, যারা কিডনী রোগে আক্রান্ত, যারা হাঁপানী বা অন্য কোন রোগের চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় স্টেরয়েড বা ইমিউনোমডুলেটিং ঔষধ নিচ্ছেন তাদেরও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে। বয়স্কদের এবং প্রেগন্যান্টদের ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এদেরই মূলত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমনের ঝুঁকি বেশী।
🔵
সংক্রমন হলে কীভাবে বোঝা যাবে?
যদি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমনের লক্ষণ থাকে তবে হাসপাতালে যেতে হবে। লক্ষণ গুলো হলো:
১. নাকের উপরে কালচে দাগ
২. নাক বন্ধ থাকা, নাক থেকে কালচে বা লালচে পুঁজ পড়া।
৩. চোয়ালের এক পাশে ফুলে যাওয়া। ব্যথা করা বা অবশ লাগা।
৪. দাঁতে ব্যথা হওয়া, দাঁত আলগা হয়ে যাওয়া।
৫. চোখে ঘোলা দেখা বা ডাবল দেখা, চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের চারপাশ লাল হওয়া।
৬. শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যাথা
৭. জ্বর থাকা এবং চামড়ায় ফোলা বা পুঁজ হওয়া
৮. মাথা ব্যথা, চেতনা কমে যাওয়া।
৯. কাশি ও কফের সাথে রক্ত আসা।
১০. বমির সাথে রক্ত আসা।
🔵
সংক্রমন না হবার জন্য কী করণীয়?
১. ডায়াবেটিস আছে কিনা দেখতে হবে, থাকলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
২. করোনার সংক্রমন প্রতিরোধ করতে হবে, টিকা দিতে হবে, পরিষ্কার ডাবল মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, জনসমাগম থেকে দূরে থাকতে হবে, বাসাতে থাকতে হবে।
৩. করোনা হয়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। নিজে নিজে বা ঔষধের দোকানদারদের পরামর্শে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ নেওয়া যাবে না।
৪. পরিষ্কার, খোলামেলা জায়গায় থাকতে হবে। নিজের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলে বাগান করা, স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কাজ করা পরিহার করতে হবে।
৫. অক্সিজেন নেবার প্রয়োজন হলে হিউমিডিফাই করার জন্য পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি ব্যবহার করতে হবে।
Dr. Taif Hasan Himel,
Assistant Surgeon at Ministry of Health and family Welfare,
Paediatrics at Dhaka Shishu Hospital.

No comments

Powered by Blogger.